Monday, October 15, 2012

Aliens (এলিয়েন) বা ভিনগ্রহের প্রাণী


আহমদুর রহমান: ।। আমরা অনেকেই একটি বিষয় নিয়ে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত থাকি, তা হল এলিয়েন(Aliens) কি আসলেই আছে? থাকলে কি রকম? তারা কি পৃথিবীতে এসেছ? ইত্যাদি...চলুন যানা যাক ।।

ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েন(Aliens) কিঃ এলিয়েন(Aliens)  বলতে পৃথিবী-ভিন্ন মহাকাশের অন্য কোনো স্থানের প্রাণকে বোঝায়। অনেকেই ভিনগ্রহের প্রাণী বলতে মানুষের আকৃতির প্রাণী বুঝে থাকলেও বস্তুত যেকোনো ধরণের প্রাণীই পারে- এ ধারণায় পৃথিবী-ভিন্ন অন্য জগতের একটা সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়াও ভিনগ্রহের প্রাণী হতে পারে।

শব্দগত ব্যাখ্যাঃ ইংরেজি aliens শব্দটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনাহুত কিংবা অপরিচিত আগন্তুককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের অজ্ঞতাই মূলত এই অপরিচিত
প্রাণীদের জন্য aliens নামটি বরাদ্দ করেছে।

অস্তিত্বঃ বহু বহুদিন থেকেই পৃথিবীর মানুষের বিশ্বাস যে, পৃথিবীর বাইরেও মহাকাশের অন্যত্র প্রাণ রয়েছে। মহাবিশ্বের অনন্ত মহাকাশের কেন্দ্রে নয় বরং একপাশে, মিল্কিওয়ে তারকামণ্ডলের নিতান্ত ছোটখাটো একটি সৌরজগতের বাসিন্দা মানুষএই মিল্কিওয়েতেই রয়েছে ২০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র, আর তাদের কোনো কোনোটিকে ঘিরে ঘুরছে পৃথিবীসদৃশ নিষ্ক্রীয় বস্তুপিণ্ড। মিল্কিওয়ে ছাড়াও মহাকাশে আবিষ্কৃত হয়েছে শতকোটি তারকামণ্ডল (galaxy) আর সেখানেও যে পৃথিবীসদৃশ নিষ্ক্রীয় বস্তু আছে, তা শ্রেফ ধারণা নয়, অঙ্ক কষে বলে দেয়া যায়। তাই বিজ্ঞানীরা যৌক্তিকভাবেই ভাবছেন, পৃথিবীর বাইরের অন্যান্য যেকোনো স্থানেই পৃথিবীর মতো প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যাবেই। ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞান কোনো সিদ্ধান্ত না জানালেও অনেকেই পৃথিবীতে তাদেরকে দেখার দাবি করেছেন এবং পৃথিবীর একটা বৃহত্তর অংশের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। । রয়টার্স বিসিএমএম-এর এক বিশ্ব জরিপে (২২টি দেশের ২৩,০০০ প্রাপ্তবয়ষ্কের উপর পরিচালিত) দেখা যায়  (৪০%); মানুষের বিশ্বাস যে, ভিনগ্রহের প্রাণীরো মানুষের মাঝে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। বাজার গবেষণা সংস্থা BCMM-এর মতে, জনসংখ্যার সাথে এই বিশ্বাসের একটা আনুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে (জনসংখ্যা:এলিয়েন বিশ্বাস), কেননা কম জনসংখ্যার দেশে এই বিশ্বাসও তুলনামূলক কম। জরিপে দেখা গেছে এই বিশ্বাস পুরুষের (২২%) তুলনায় নারীর কিছুটা কম (১৭%)। আর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই বিশ্বাস বেশি।

সন্ধানঃ ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে আংকিক কিংবা যৌক্তিক কিংবা বিশ্বাসগত এই বিপুল সমর্থনের কারণেই তাই স্বভাবতই গবেষকরা খুঁজে চলেছেন এরকম কোনো প্রাণের। এই সন্ধান-কার্যক্রমে গবেষকরা একদিকে অতীতের ঐতিহাসিক উৎসে খোঁজ করছেন ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আর বিজ্ঞানীরা খোঁজ করছেন পৃথিবীর বাইরের গ্রহ কিংবা উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব।

ঐতিহাসিক উৎসঃ যেহেতু অনেকেই দাবি করেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করে এবং তাদের দেখাও পাওয়া গেছে, তাই এটা অসম্ভব নয় যে, পৃথিবীর আদি বাসিন্দারাও ভিনগ্রহের প্রাণী দেখেছেন। তাই ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের প্রমাণ জোগাড়ে গবেষকরা ব্রতী হয়েছেন ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে। ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ব্যক্তিত্ব হলেন এরিক ভন দানিকেনতিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন পান্ডুলিপি আর দেয়াল-চিত্র কিংবা দেয়াল-লিখনে খুঁজে দেখেছেন এলিয়েনদের পৃথিবীতে আসার নানা প্রামাণিক দলিল। যদিও তাঁর এসব দৃষ্টিকোণের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি রয়েছে।

অত্যাধুনিক উৎসঃ ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান। পৃথিবীর অভিযানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেটি (SETI: Search for Extraterrestrial Intelligence), যা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক। 'সেটি' বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান করে পৃথিবী থেকেই। বর্তমানে ১০টিরও বেশি দেশে 'সেটি' এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

মঙ্গল গ্রহে প্রাণঃ আমাদের সৌরজগতের মঙ্গল গ্রহের অবস্থান, সূর্যের দিক থেকে পৃথিবীর ঠিক পরেই। একারণে এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটার মতো উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছেন বিভিন্ন অভিযান। বিশ্বাস করা হয় যে, একসময় মঙ্গলের বুকে পানি তরল অবস্থায় ছিলো, তাই এখনও ভূপৃষ্ঠের নিচে পানির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে। মঙ্গলের আবহাওয়ায় মিথেন পাওয়া গিয়েছে। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ফিনিক্স মার্স ল্যান্ডার তার পরীক্ষাগারে প্রমাণ করে যে, মঙ্গলের মাটির নমুনায় পানির অস্তিত্ব রয়েছে। মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার-এর পাঠানো সাম্প্রতিক ছবিতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খুব বেশিদিন হয়নি (বিগত ১০ বছরের মধ্যেই) মঙ্গলের ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত হয়েছিলো।

টাইটান উপগ্রহে প্রাণঃ সৌরজগতের শনি গ্রহের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটানে দীর্ঘদিন থেকে প্রাণের সন্ধান পাবার আশায় সন্ধান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার বিজ্ঞানীরা ক্যাসিনির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে টেলিগ্রাফ অনলাইন-কে জানান যে, শনির অনেকগুলো উপগ্রহের মধ্যে একমাত্র টাইটানেই প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে এবং সেখানে জীবনের উৎপত্তি হয়েছে এবং তারা শ্বাস নিতে পারছে। আরো জানা গেছে যে, এর ভূপৃষ্ঠের জ্বালানী খেয়ে বেঁচে আছে এই ভিনগ্রহের প্রাণীরা। ইকারাস সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টাইটানের হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রহটির আবহমণ্ডলে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি হারিয়ে যাচ্ছে। এথেকেও প্রমাণিত হয় যে, এই প্রাণীরা শ্বাস নিতে সক্ষম হচ্ছে এবং তারা অক্সিজেন নয় বরং হাইড্রোজেন গ্রহণ করে বেঁচে আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা সূর্যের আলোর সাথে বায়মণ্ডলে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে অ্যাসিটিলিন তৈরি করছে (যদিও ক্যাসিনি'র পাঠানো তথ্যে তা প্রমাণ হয়নি)।

তবেঃ এখনও মানুষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান পেয়েছে বলে জানা যায়নি, আবার এরকম দাবি যে একেবারেই নেই এমনটাও সঠিক নয়। তবে দেখা যাক আর নাই যাক আধুনিক বিজ্ঞানের সূত্রমতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে একটা ধারণা ঠিকই করা যায়।

গণমাধ্যমে উপস্থাপনাঃ  ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে বহু চটকদার এবং কখনও কখনও ভাবগম্ভির কাজও হয়েছে। যেমন লেখা হয়েছে বই, প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার প্রতিবেদন, তেমনি তৈরি হয়েছে গান, চলচ্চিত্র এবং এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।

ঊৎসঃ ১.উইকিপিডিয়া   ২. BBC   ৩. অনলাইন


No comments:

Post a Comment